অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ
আপনি কি অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ এ দুশ্চিন্তায় ভুগছেন? আপনি হয়তো ভাবছেন অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ কি? অতিরিক্ত ঘুম অনেক কারণেই হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম পাড়া শরীরের জন্য উপকার হলেও অতিরিক্ত ঘুম পারাও আপনার শরীরে অনেকটাই ক্ষতিকারক। আপনি যদি অস্বাভাবিক ঘুম পাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করে থাকেন তবে আজকের পর্বটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। আজকে আমরা আলোচনা করব অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ সম্পর্কে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক, অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ কি।
অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণে হরমোনের ওপর অনেকটা প্রভাব ফেলে। এই সমস্যা গুলো বিশেষ
করে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। ক্লান্তি বোধ
করার কারণে শরীরে খুব কম শক্তি থাকে যার কারণে মানুষ সাধারণত ক্যালরিযুক্ত খাবার
খাওয়া শুরু করে। যার ফলে ডায়াবেটিকস এর মত রোগ হয় এবং ঘুমটাও বেশি হয়। তবে
চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃঅতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ
- অতিরিক্ত ঘুমের কারণ কি?
- অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়
- সকালে বেশি ঘুমালে কি হয়
- ঘুম কমানোর ব্যায়াম
- দিনের বেলা ঘুম কমানোর উপায়
- অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির দোয়া
- বার বার ঘুম আসার কারণ
- অতিরিক্ত ঘুম কি স্ট্রোকের কারণ
- অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ শেষ কথা
অতিরিক্ত ঘুমের কারণ কি?
অতিরিক্ত ঘুমানো কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হাইপারসোমনিয়া বলে থাকে। ঘুমের
জন্য কিছু সিমা থাকে। যেমন প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ঘুমানোর আদর্শ বয়স সীমা হলো
৭ থেকে ৯ ঘণ্টা। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঘুমের এই
সময়সীমা প্রযোজ্য না। এখানে প্রাপ্তবয়স্ক বলতে ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত ধারণা
করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যদি দিনের নয় ঘন্টার বেশি ঘুমায় তবে সেটিকে
অতিরিক্ত ঘুমানো ধরা বলে।সাধারণত দিনে কেউ যদি ৭ থেকে ৭ ঘণ্টা বেশি ঘুমায়
তাহলে তার হাইপারসোমনিয়া রোগ রয়েছে। হাইপারসোমনিয়া রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে।
যেমনঃ
- শরীরে শক্তি কম থাকা
- স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা
- কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়
আমরা অনেকেই জানিনা অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ কি। আবার অনেকেই চিন্তা করে
অতিরিক্ত ঘুম থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় বা কিভাবে এই বদ অভ্যাস বাদ
দেওয়া যায়। যারা এধরনের চিন্তা করে থাকেন তারা সম্পূর্ণ পোস্ট মনোযোগ সহকারে
পড়বেন। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তির
উপায় সম্পর্কে। অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তির অনেকগুলো উপায় রয়েছে
যেমনঃ
- সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করবেন। পানি শরীরকে সতেজ করে তোলে, মস্তিষ্কও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। এতে ঘুম ঘুম ভাব অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও ঘুম থেকে উঠেই ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন এতে ঘুম একদম কেটে যায় এবং হালকা গরম পানিতে ভালো করে গোসল করুন। বেশি করে পানি দিয়ে ভালো করে গোসল করলে শরীরে অনেকটাই ফ্রেশ লাগে এতে আপনার সারাদিনের ঘুম ঘুম ভাব কম লাগবে। এভাবে আপনি প্রতিদিন এই অভ্যাসটি করলে অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- আমাদের অনেকেরই একটা বদ অভ্যাস রয়েছে যে সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকেই নাস্তা করতে চাইনা। কিন্তু যদি আপনি ঘুম থেকে ওঠার ৩০ মিনিটের মধ্যে নাস্তা করেন তবে সারাদিন চলাফেরা করার জন্য কিছু বাড়তি শক্তি পাবেন। অতএব আমাদের সকলেরই উচিত ঘুম থেকে সকালে উঠে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে নাস্তা করে নেওয়া এতে শরীরের জন্য অনেকটা উপকারে আসবে।
-
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো সময় মতো ঘুমানো।
অনেকে রয়েছে রাত ৮ টার সময় ঘুমিয়ে পড়ে। এতে আপনি যদি সকাল সকাল ঘুম
থেকে ওঠেন তবু নয় ঘন্টার বেশি ঘুম হয়ে যাবে। অতিরিক্ত ঘুমের মধ্যে
পড়ে যাবে। ১০ টা হলো ঘুমানোর উত্তম সময়। আবার যারা চাকরি করে তারা অনেকেই
ছুটির দিনে একটু বেশি ঘুমায় তবে এই অভ্যাসটি না করাই ভালো।
- এক্সারসাইজ বা ব্যায়ামঃ প্রত্যেকটি মানুষকে নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এটি আপনার শরীর ও মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার শরীরে একটি ভারসাম্যতা এসে যাবে এবং শরীরের দুর্বলতা ভাব থাকে সেটিও দূর হয়ে যাবে। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে শরীর যদি দুর্বল থাকে তবে ঘুম বেশি হয়।
-
আপনার কখন ঘুম থেকে ওঠা জোরে তার ওপর ভিত্তি করে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন।
আপনার যখন ঘুম থেকে ওঠার প্রয়োজন হবে সেই অনুযায়ী যদি আপনি
অ্যালার্ম দিয়ে রাখেন এতে আপনার ঘুম কমাতে সাহায্য করবে। এই পদ্ধতিতে
আপনি অতিরিক্ত ঘুম থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
উপরোক্ত মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যতটা
পারেন উপরের সবগুলো বিষয় মানিয়ে চলার চেষ্টা করবেন এতে আপনার বেশি ঘুম থেকে
বিরত থাকতে সাহায্য করবে।
সকালে বেশি ঘুমালে কি হয়
অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ এ আপনার শরীরে রোগ বয়ে আনতে পারে। সকালে ঘুমের
পরিমাণ বেশি হলে আপনার অনেক ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনের চেয়ে
অতিরিক্ত ঘুম ডেকে আনতে পারে ডায়াবেটিস থেকে বন্ধ্যাত্বের মতো মারাত্মক কিছু
রোগ। সেরোটোনিন হরমোনের সাহায্যে ঘুম নিয়ন্ত্রিত হয়। অতিরিক্ত
ঘুম সেরোটোনিন এর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিউরোট্রান্সমিটার কেও
বাধা দেয়।
সে জন্য অনেকেই সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার পরে মাথাব্যথার অভিযোগ করেন। অনেকেই
দেখা যায় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যাথা সহ নানান রোগে ভুগে থাকেন এর
কারণ মূলত সকালে ঘুম থেকে ওঠার কারণ। সকালে অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ
এ মাথা ব্যাথা এবং শরীর দুর্বল লাগে। তাই সব থেকে ভালো সকাল সকাল ঘুম থেকে
উঠা।
ঘুম কমানোর ব্যায়াম
প্রতিটি মানুষেরই ব্যায়াম করা আবশ্যক। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মন দুটোই
ভালো থাকে। যেহুতু আমরা সকলেই অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করে
থাকি। তাই আপনার প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করলে
আপনার অতিরিক্ত ঘুম কমাতেও সাহায্য করবে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন
ব্যায়াম করলে ঘুম কমাতে সাহায্য করে।
- দড়ি লাফ
- জগিং জাম্প
- প্রতিদিন সকালে দৌড়ানো
দিনের বেলা ঘুম কমানোর উপায়
আমাদের কমবেশি প্রত্যেকের দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যেকের
উচিত দিনের বেলায় কম ঘুম পাড়া। এতে আপনার শরীর ভালো থাকবে। দিনে ঘুম পাওয়ার
কারন হলো রাতে ভালোভাবে না ঘুমানো। রাতে অন্তত৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমালে দিনের বেলায় ঘুম অনেকটাই কম হয়। দিনের বেলায় যদি
খুব ঘুম আসে তবে বেশি না ঘুমিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ঘুমানো ভালো। ঘুম দূর করতে
চা-কফি পানের উপায়টি বেশ পুরনো। দিনের বেলা ঘুম আসলে এটি কাজে লাগাতে
পারেন।
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির দোয়া
অনেকে রয়েছে অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ এ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে থাকেন।
জাতীয় অতিরিক্ত ঘুম থেকে আমাদের বিরত রাখেন। এবং এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহতালা
আমাদের যেটুকু ঘুমের প্রয়োজন তার তৌফিক দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত ঘুম থেকে
মুক্তির দোয়া হলোঃবাংলায় (ইয়া আল্লাহ' সামান্য ঘুম দ্বারায় আমার প্রয়োজন
পূরণ করুন এবং আপনার আদেশ পালনে রাতে জাগরনের তাওফীক দিন)।
বার বার ঘুম আসার কারণ
অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ বার বার ঘুম আসার কারণ হলো শরীর দুর্বলতা। আমাদের
শরীর দুর্বল থাকে তবে বারবার চোখে ঘুম আসবে এটাই স্বাভাবিক। অতিরিক্ত পানি পান
না করার কারণে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ হতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায়
আমরা ছোট কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা দেখাতে যায় এটি মোটেও ঠিক নয় এর
কারণে অনেক সময় স্বাভাবিকের তুলনায় অসাভাবিক ঘুম চলে আসে।
আবার অনেকের দেখা যায় স্মৃতিশক্তি কম থাকার কারণে কোনো কিছু মনে করতে পারে না।
আর সেই বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে মানুষের পর্যাপ্ত পরিমাণে থেকে বেশি
ঘুম হয়। মূলত এগুলোইঅতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ।
অতিরিক্ত ঘুম কি স্ট্রোকের কারণ
মানষ স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ঘুম পারলে স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। অনেক
সময় দেখা যায় আমাদের চারিপাশে অনেকেই ঘুমের মাঝেই স্ট্রোক করে থাকেন।
অতিরিক্ত চিন্তার কারনে মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে এতে ঘুমটাও বেশি
হয় আর সেই কারণেই ঘুমের মাঝেই স্ট্রোক করে। তাই আমাদের অতিরিক্ত ঘুম পাড়ার
বদঅভ্যাস ত্যাগ করে স্বাভাবিক সময় ধরে ঘুম পাড়ার প্রয়োজন। এতে শরীর ও
স্বাস্থ্য দুটোই ভাল থাকবে।
অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার
কারণ সম্পর্কে। মান স্বাভাবিকের তুলনায় অস্বভাবিক ঘুমালে শরীরের জন্য অনেক
ক্ষতিকর দিক বয়ে আনতে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিত দিনে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা
ঘুমানো। এতে করে আপনার মাথাব্যথা থেকে শুরু করে নানাবিধ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
তাছাড়া অতিরিক্ত ঘুমের কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম
হওয়ার কারণ সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত থেকে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে
জানাবেন এবং আজকের পোস্টটি যদি আপনার ভাল লাগে তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার
করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url