বরই গাছের কলম - বরই গাছের গুটি কলম - বরই গাছে কলম করার নিয়ম
প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্ট টি পড়ে আপনারা জানতে পারবেন বরই গাছে কলম করার নিয়ম সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বরই গাছে কলম করার নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নন তাদের সুবিধার্থে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করব বরই গাছে কলম করার নিয়ম সম্পর্কে এছাড়াও এই পোস্ট টি পড়ে আরো জানতে পারবেন বরই গাছের কলম, বরই গাছের গুটি কলম করার নিয়ম সম্পর্কে।
তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নিন,গুটি কলম কাকে বলে, বরই গাছের কলম, বরই গাছের গুটি কলম, বরই গাছে কলম করার নিয়ম গুলো কি কি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
- গুটি কলম কাকে বলে?
- বরই গাছের গুটি কলম | বরই গাছের কলম
- বরই গাছে কলম করার নিয়ম
- বরই গাছের কলম করার সুবিধা
- শেষ কথা | বরই গাছের কলম | বরই গাছের গুটি কলম | বরই গাছে কলম করার নিয়ম
গুটি কলম কাকে বলে?
বরই গাছের গুটি কলম করার নিয়ম জানার আগে চলুন জেনে নেই গুটি কলম কাকে বলে সেই সম্পর্কে। বরই গাছের কলম কয়েক পদ্ধতিতে করা যায় এরমধ্যে গুটি কলম একটি। গুটি কলম করার জন্য একটি গাছের একটি সরু কান্ডের ২-৩ ইঞ্চির বাকল তুলে ফেলা হয়। তবে বাকল তোলার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যেন কান্ডের কোন ক্ষতি না হয়। এরপর সেখানে পুরনো শুকনো গোবর ও মাটির সংমিশ্রণে তৈরিকৃত মাটি হালকা একটু পানি দিয়ে ভিজিয়ে বাকল তোলা স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে।এরপর এর উপর কাপড় বা খড় দিয়ে পেঁচিয়ে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেধে দিতে হয়। এরপর নিয়মিত পানি দিতে থাকলে সেখানে অস্থানিক মূল গজায়। মূলসহ উদ্ভিদের শাখাটি বিচ্ছিন্ন করে অন্যত্র আর্দ্র মাটিতে রোপণ করলে সেখানে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়। এটিকে গুটি কলম বলা হয়।
বরই গাছের গুটি কলম | বরই গাছের কলম
আমরা এখন জেনে নেব বরই গাছের গুটি কলম করার নিয়ম সম্পর্কে। বেশ কয়েক বছর ধরে মানুষ ফলের বংশবিস্তারে বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। এরমধ্যে গুটি কলম, জোড় কলম ইত্যাদি পদ্ধতি। এসব কলম পদ্ধতি অবলম্বন করার ফলে উদ্ভিদের যেমন বংশবৃদ্ধি হচ্ছে তেমন উদ্ভিদের ফল ও অনেক আসছে। বরই গাছের কলম কয়েক পদ্ধতিতে করা যায় এরমধ্যে গুটি কলম একটি। বরই গাছের গুটি কলম বেশ বহুকাল ধরে চলে আসছে।
আরো পড়ুনঃ পুঁইশাক খাওয়ার ১২টি উপকারিতা
বরই গাছের গুটি কলম করার জন্য প্রথমে বরই গাছের একটি সরু কান্ড নির্বাচন করতে হবে এরপর গাছের সেই সরু কান্ডের ২-৩ ইঞ্চির বাকল তুলে ফেলতে হবে। তারপর কিছু মাটি নিয়ে তাতে প্রয়োজন মাফিক গোবর সার, ইউরিয়া সার ও টিএসপি সার মিশিয়ে কাই তৈরী করতে হবে এবং তা ঐ ডালটিতে এরপর এর উপর কাপড় বা খড় দিয়ে পেঁচিয়ে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেধে দিতে হয়। এরপর নিয়মিত পানি দিতে থাকলে সেখানে অস্থানিক মূল গজায়। আনুমানিক একমাস পরে এই মূল আমরা দেখতে পাব। পরবর্তীতে এটিকে মাতৃগাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি পুর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র গাছ হিসাবে আমরা পাই। এভাবেই বরই গাছের গুটি কলম করা হয়।
বরই গাছে কলম করার নিয়ম
উপরে আমরা বরই গাছের গুটি কলম করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা আলোচনা করব স্টক চারা এবং সায়ন এর মাধ্যমে বরই গাছে কলম করার নিয়ম সম্পর্কে। বরই গাছের কলম করার জন্য বেশ কিছু ধাপ রয়েছে প্রত্যেকটি জিনিস ধাপে ধাপে আমরা নিচে আলোচনা করব। বরই গাছে কলম করার নিয়ম নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
বরই গাছের কলম করার জন্য যে সব প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রয়োজন চলুন সেগুলো প্রথমেই জেনে নেই। প্রয়োজনীয় উপকরন গুলো হল, প্রথম উপকরণটি হল একটি ষ্টক গাছের চারা, এরপর লাগবে কাংখিত গাছের ডগা বা সায়ন,গ্রাফটিং চাকু, ব্লেড, সিকেচার, পলিথিন ক্যাপ, পলিথিন ফিতা, সুতলী এবং দক্ষ মালি ইত্যাদি।
কলম করার উপযুক্ত সময়ঃ
কলম করার উপযুক্ত সময় মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত। কারণ এ সময় বাতাসে আদ্রতা ও গাছের কোষের কার্যকারিতা বেশী থাকে। ফলে তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে এবং সফলতার হারও বেশি পাওয়া যায়। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে শীতকালে কলম খুব একটা ভালো হয় না। তাই শীতকাল এড়িয়ে চলাই ভালো।
স্টক চারা তৈরিঃ
স্টক চারা তৈরির জন্য প্রথমে দেশি যেকোনো বরই গাছের বিজ প্রয়োজন। এই বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায় আবার যেখানে সেখানে অনেক সময় জংলি বরই গাছ দেখা যায় সেগুলোকেউ আমরা স্টক চারা হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।
আরো পড়ুনঃ জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
স্টক চারা তৈরির ধাপসমুহঃ
পরিণত গাছ হতে সুস্থ ও সবল বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর স্টক চারাটি সরাসরি মাটি বা পলিব্যাগে তৈরি করতে হবে।
যদি চারাটি আমরা মাটিতে তৈরি করতে চাই তাহলে মাটি ভালভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরা করে আগাছা পরিস্কার করে প্রয়োজনীয় জৈব সার মিশিয়ে বেড আকারে করতে হবে। বেডটির প্রস্থ যেন ১ মিটার এর বেশি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর পর বেডে ২৫ সেমিঃ পর পর লাইন করে প্রতি লাইনে ২০ সেমিঃ পর পর চারা/ বীজ রোপণ করতে হবে এবং কলম করার পূর্ব পর্যন্ত স্টক চারাগুলোর সকল প্রকার পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে।
চারা পলিব্যাগে তৈরি করলে ২০ সেমিঃ x ১২ সেমিঃ পলিব্যাগ নিতে হবে। দোঁয়াশ মাটির সাথে অর্ধেক পচা গোবর ও কম্পোস্ট মিশিয়ে পলিব্যাগ ভরতে হবে।
প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বা চারা রোপণ করতে হবে। চারা গজানোর পর পলিব্যাগগুলো যেন কাত হয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অন্যথায় চারার গোড়া বাঁকা হয়ে যাবে।
এবার ব্যাগটি বেডে ২৫ x ২০ সেমিঃ দুরত্বে রোপন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে পলিব্যাগটি যেন মাটির সমান্তরালে থাকে। এতে খরা মৌসুমে পানি সেচ কম লাগে এবং চারাটি সুস্থ ও সবল হয়।
সুস্থ, সবল এবং নিরোগ চারা পাওয়ার জন্য আগাছা, রোগ ও পোকা-মারড় দমন করতে হবে। প্রয়োজনে গাছে সার ও সেচ দিতে হবে।
স্টক চারা রেডি হয়ে গেলে এরপর সায়ন তৈরি করতে হবে।
বরই গাছের কলম করার উপযোগী সায়ন নির্বাচনঃ
স্টক চারাটির বয়স ১.৫-২.০ মাস হতে হবে।সায়নের ব্যাস স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে। সায়নের রং সবুজ বা সবুজাব হবে। ডগাটির আগাথেকে ১০-১৫ সেমিঃ কচি অংশ বাদ দিয়ে নিচের ১৫-১৮ সেমিঃ অংশ সায়ন হিসেবে নিতে হবে।
সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।
উপরিউক্ত ধাপ গুলো সম্পন্ন করা হলে স্টক চারটি মধ্যেখান দিয়ে কেটে সায়ন টি স্টক চারার মধ্যে স্থাপন করতে হবে। এরপর একটি পলিথিনের টেপ দিয়ে জোর স্থানে সেটিকে পেঁচিয়ে দিতে হবে । এবং পুরো সায়ন অংশটুকু একটি স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
বরই গাছের কলম করার পর পরবর্তী পরিচর্যাঃ
বরই গাছের কলম করার পর অবশ্যই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
- কলম করার পরে গাছটি অতিরিক্ত রোদে না রেখে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
- স্টক গাছে অনাকাঙ্ক্ষিত কুশি বের হওয়ার পর পরই ভেঙ্গে দিতে হবে তবে সায়ন দিয়ে কুসি বের হলে তা রেখে দিতে হবে ।
- কলমের বেড/ব্যাগে প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা/ রসের ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
- সায়নের মাথায় কুঁড়ি গজানোর সাথে সাথেই পলিথিনের ক্যাপটি খুলে দিতে হবে।
- জোড়াটি স্থায়ী হয়ে গেলে অর্থাৎ কলম করার প্রায় তিন মাস পর পলিথিনের ফিতাটি খুলে দিতে হবে।
- বেডের/ ব্যাগের আগাছা, রোগ ও পোকা-মাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরই গাছের কলম করার সুবিধা
আমরা এখন দেখে নেব বরই গাছের কলম করার সুবিধা গুলো কি কি।
- এটি খুবই সহজ পদ্ধতি এবং করতে খুব একটা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না।
- ভালো উন্নত জাতের ফল পাওয়া যায়।
- খুবই কম সময়ে ভাল জাতের ফুল বা ফল উৎপাদন করা যায়।
- কলম পদ্ধতিতে তৈরিকৃত গাছ এর আকৃতি ছোট হয়ে থাকে কিন্তু ফলন ভালো হয়।
- খরচ তুলনামূলকভাবে কম তাই বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী।
- যেসব গাছের বীজ হয় না সেসব গাছের বংশবিস্তার করতে এই পদ্ধতি টি খুবই উপযোগী।
শেষ কথা | বরই গাছের কলম | বরই গাছের গুটি কলম | বরই গাছে কলম করার নিয়ম
প্রিয় পাঠক আমরা এই পোস্টের একদম শেষ দিকে চলে এসেছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বরই গাছে কলম করার নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত ছিলেন ছিলেন না তাদের সুবিধার্থে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি গুটি কলম কাকে বলে, বরই গাছের কলম, বরই গাছের গুটি কলম, বরই গাছে কলম করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে যেন আপনারা এই একটি পোষ্ট পড়ে বরই গাছে কলম করার নিয়ম সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পেয়ে যান।
আরো পড়ুনঃ বড়ই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
পোষ্ট টি আপনার কাছে উপকারী মনে হলে শেয়ার করুন আপনার পরিচিত কৃষক দের সাথে যেন তারা বরই গাছে কলম করার নিয়ম এবং বরই গাছের গুটি কলম করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন খুব সহজেই এবং তারা বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হয়। ১৬৮২১
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url