বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী সম্পর্কে জানুন
আসসালামু আলাইকুম। আজকের পোস্টে হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবনের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। অনেকেই আছে য়ারা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনের কাহিনী লিখে গুগলে সার্চ করে থাকে।আজকের আর্টিকেল তাদের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকের পোস্টে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী বিষয়ের সকল তথ্য নিয়ে বিস্তারিতভাবে
সাজিয়েছি।
তাহলে দেরি না করে হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবনের সকল তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নিন। আজকের পোস্টে হযরত মুহাম্মদ সাঃ পিতামাতা, জন্ম, মৃত্যু, স্ত্রী,
জীবনের কাহিনী, জানতে সমপূর্ন পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ ছিলেন একজন নবী রাসুল। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীতে তার
বান্দাদের এবং তার নবী রাসূলগণকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি যুগে যুগে সৃষ্টি করেছেন
অনেক নবী রাসূলগণকে। যেমনঃ তিনি সৃষ্টি করেছেন, ইয়াকুব নবী, ঈসা নবী, মুসা
নবী, ইউসুফ নবী, ইব্রাহিম নবী, মানব সৃষ্টির সর্বসেরা নবী হযরত মুহাম্মদ
সাঃ। হযরত মুহাম্মদ সাঃ তিনি মুসলিম বিশ্বের গর্ব।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পুরো নাম
হযরত মুহাম্মদ সাঃ পুরো নাম হল, মুহাম্মদ-ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম। এছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর একাধিক উপাধি উপনাম
রয়েছে। যেমনঃ আল-আমিন, আহমাদ, মুযযাম্মিল।উপনাম হল আবুল কাসিম।
মুহাম্মদ নামের অর্থ প্রশংসনীয়। পবিত্র কুরআনে মুহাম্মদ নাম চারবার এসেছে।
আল কুরআনের ৪৭ নং সূরার নাম মুহাম্মদ।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পিতা মাতার নাম
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পিতার নাম হলো, আব্দুল্লাহ। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পিতা তার
জন্মের প্রায় ছয় মাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মাতার নাম হলো, আমিনা বিনতে ওহাব।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দুধ মাতার নাম হলো, হালিমা রাঃ।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিন-হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ
ইংরেজি-২০২৩
ইসলাম ধর্মের প্রচারক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামান্বিত মহামানব বিশ্বনবী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিন হলোঃ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান সৌদি আরবের
অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার
জন্মের তারিখ ছিল ১২ই রবিউল আউয়াল, ইংরেজি সন মোতাবেক ৫৭০
খ্রিস্টাব্দে।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রীদের নাম
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মোট স্ত্রী ১১ জন। হযরত মুহাম্মদ সাঃ প্রথমত তিনি
আবু বক্কর ওমরের কন্যা আয়েশা ও হাফসাকে বিয়ে করেন এবং তিনি তার কন্যাদের
উসমা ও আলীকে দেন আয়েশা একমাত্র কুমারী যাকে মুহাম্মদ বিয়ে করেছিল।
নিচে নবীর ১১ জন স্ত্রী ও নামের অর্থ দেয়া হলো।
খাদিজা- নামের অর্থ-অসম্পূর্ণ
সাওদাহ-নামের অর্থ-খেজুর গাছের পটভূমি
আয়িশাহ-নামের অর্থ-জীবন্ত
হাফসাহ-নামের অর্থ-একত্রিত
জয়নব-নামের অর্থ-সুগন্ধি
জুওয়াইরিয়া-নামের অর্থ-প্রভাবিত ধারা
মাইমুনহা-নামের অর্থ-বারকাত প্রাপ্তা
সাফিয়া-নামের অর্থ- ছাটাইকৃত
মারিয়া-নামের অর্থ-বাছুরওয়ালী গাভী
রায়হানা-নামের অর্থ-ফুলের তোড়া
উম্মে সালমা-নামের অর্থ-নরম হাত পা ওয়ালি মা
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মোট সন্তান ছিলেন সাত জন
নবীজি (সা.)- এর সাত সন্তানের মধ্যে এই ঘরেই তিন পুত্র। কাসেম (রা.), তাহের-তৈয়ব
(রা.), আবদুল্লা (রা.) এবং চার কন্যা জয়নব (রা.), রুকাইয়া (রা.), উম্মে
কুলছুম (রা.) ও ফাতিমা (রা.)।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর তিন ছেলে একজন একাক বয়সে মারা যান। পরবর্তীতে
তার শুধু চারটি মেয়ে বেঁচে ছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু তারিখ হল, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন তিনি
মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু ইসলামের ইতিহাসে একটি
গুরুত্বপূর্ণ রহস্যময় ঘটনা যা সংঘটিত হয়।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কবর কোথায়
হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর কবর হলো, বর্তমান মসজিদ নববীর অভ্যন্তরে তার কবর
রয়েছে। মদিনায় স্ত্রী আয়েশার ঘরের যে স্থানে মৃত্যুবরণ করেন জানাজার
পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা প্রথম ও ওয়ালদের
সময়ে মসজিদে নববী প্রসারণ করে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কবরকে সমপ্রসারিত এলাকার
ভিতরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নবী করীম হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
কতিপয় প্রামাণ্য উৎস
পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিস ছাড়া অন্যান্য সূত্র গুলির কোনটি বিশ্বস্ত ও সন্দেহ
মুক্ত নয়। কারণ বাইবেল বিকৃত অন্ধ যুগের লিখিত প্রস্তুগুলি লেখক এবং রক্ষিত
থাকার সূত্র মৌখিক বর্ণনা গুলির অবস্থান নির্ভরযোগ্য নয়। কবিতা
গুলি রামায়ণ ও মহাভারতের ন্যায় অতিরঞ্জিত গ্রিকদের
লিখিত পুস্তগুলির নির্ভরযোগ্যতার কোনো প্রমাণ নেই। এবং ইউরোপীয়
ঐতিহাসিক দের ইতিহাস যে অমূলক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্ম সংক্রান্ত
ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ও হাদিস ছাড়া অন্যান্য সূত্রের উপর নির্ভর করা যায়
না।
প্রাচীন কীতি ও শিলালিপি বর্তমানে ঐতিহাসিক তথ্যের প্রধান ও নির্ভরশীল
সূত্র হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে। কিন্তু ধর্মীয় ব্যাপারে এসব ইতিহাসে কোন মূল্য
নেই। কারণ যাদের উপর এসব তথ্য সংগ্রহের ভার গঠন করা হয়েছিল স্বয়ং তারাই
ধর্মদ্রোহী। শিলালিপির উপর নির্ভর করে শত শত আনুমানিক বিষয়ে সংযোজিত করা
হয়ে থাকে। অথচ এসব অনুমান নির্ভুল হওয়ার কোন তথ্য প্রমাণ নেই। যে শিলা লিপির
উপর ইতিহাসের ভিত্তি স্থাপন হয় তা প্রবঞ্চনামূলক হওয়া সম্ভাবনাও বেশি। আবার
বর্তমানে কীিত ও শিলালিপি আবিস্কার করা অতি কর্তৃত্বের বিষয়। সুতরাং সুক্রিতি
লাভের উদ্দেশে বিষয় অনেক প্রচারণা প্রবঞ্চনামূলক হয়ে থাকে। যদি নির্ভরশীল
দ্বীনদার লোকের সাহায্য পাওয়া যায় তবে অবশ্যই তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
আদ জাতি
আদ সম্প্রদায়ের পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহতালা হযরত আলায়হিস সালামকে প্রেরণ
করেছিলেন। এরা বালুকাময় উৎস স্থানে ইয়ামান দেশে বসবাস করত। আল্লাহ তাদেরকে
চক্ষু কর্ণ ও অন্তর দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তারা অতি বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, সাহসী
ছিল। এ নগরের সৌধ স্তম্ভ গুলি এত সুন্দর মজবুত ও উচ্চবিলাসী ছিল যার তুলনায়
জগতের কোন নগর ছিলনা। এরা হযরত নূহ আলাইহি সালাম এর পরে ছিল এবং খুব শক্তিশালী
জাতি ছিল। উচ্চস্থানে তারা অনেক বড় বড় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছিল। প্রাসাদ
সমূহ নির্মাণ করেছিল যা দর্শন করলেও মনে হত যে তারা চিরদিন ইহ জগতে
থাকার মনস্থ করেছে। তাদের ক্ষমতা অতি ব্যাপক ও অতি কঠোর ছিল তাদের আক্রমণ।
আল্লাহুতায়ালা তাদেরকে দান করেছিলেন গৃহপালিত পরশু ও সন্তান বাগান ও
জলাশয়।
সামূদ জাতি
জাতিকে পথ প্রদর্শনের জন্য হযরত সালেহ আলায়হি সালাম প্রেরিত
হয়েছিলেন। তারা হিজর এবং ওয়াদিল কুরা শহরে বসবাস করত। তারা ছিল আজ জাতির
স্থলাভিষিক্ত। পৃথিবীতে ছিল তাদের ব্যাপক অধিপাত্য। নরম ভূমিকে তারা বড়
বড় প্রাসাদ এবং আবাস গৃহ নির্মাণ করেছিল। আবার পোস্তময় পাহাড়
কেটে বাড়ি ঘর নির্মাণ করতো। তারা অতি আমোদ প্রমোদ এবং সুখ শান্তিতে
থাকতো।
আজ এবং সামদ সম্প্রদায় এক সময় উন্নতির এত উচ্চ শিকড়ে আহরণ করেছিল। যে স্বীয়
শ্রেষ্ঠত্বের মুহে বিভোর হয়ে আল্লাহ পাকের অবাধ্য হওয়ার কারণে তাদের প্রতি
আল্লাহর গজব ও আজাব নাযিল হয়েছিল।
একদিন হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাবুক যাওয়ার পথে হিজর নাম এক স্থানে পৌঁছে
বললেন, জাতির দেশ এবং তিনি কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে অতি দ্রুত বেগে ওই
স্থানটি অতিক্রম করতে লাগলেন। ওই স্থানে পানি পান করতে সাহাবীদেরকে নিষেধ
করলেন। ওই স্থানের পানি দ্বারা সাহাবীগণ রুটি তৈরি করার জন্য যে খামির তৈরি
করেছিলেন তা ফেলে দিতে এবং উটকে খাওয়াতে নির্দেশ দিলেন হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর
সময় হিজর শহরের ভগ্না অবশেষে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান ছিল এখনো কিছু কিছু
ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়।
মাদয়িন সালেহ বর্তমান হিজায রেলওয়ের একটি প্রসিদ্ধ রেলস্টেশন। এই স্টেশন পাশে
অবস্থিত তথায় অবতরণ করলে পর্যটক গণ সামূদী কলাতে ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পারে।
শামজাতির শামায়ক অথবা পরের তসম জদীস আমালিকা ইত্যাদি আরও কতগুলি জাতির সন্ধান
পাওয়া যায়। কিন্তু কবিদের কবিতা আরবদের মৌখিক বর্ণনা ও ইউরোপিয়ানদের
শিলালিপির অনুমানিক কল্পনা ছাড়া তাদের ইতিহাস জানার আর কোন নির্ভরশীল সূত্র
নেই।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আরবে আবির্ভাব হওয়ার কারণ
যখন সর্বপ্রকার পাপের বিভীষিকা নিয়ে সমগ্র পৃথিবীর প্রত্যেকটি কোনণ, অলিগলি,
আনাস কানাসে কুলুষিত হয়ে পড়েছিল। সারা পৃথিবী অধির আগ্রহ নিয়ে ত্রাণকর্তার
অপেক্ষায় কাতর নয়নে তাকিয়ে ছিল সে সময়ের রহমানুর রহিম আল্লাহতালা প্রেরণ
করেন তার প্রিয় সৃষ্টির সেরা মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাঃ
-কে সাম্যবাদী, স্বাধীনচেতা, অসামান্য বীরত্বের
অধিকারী, দুর্ধর্ষ আরব জাতির আবাসভুমি, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল আরব
উপদ্বীপে।
ভৌগোলিক হিসেবে আরব দেশের মক্কা নগরী ভূমন্ডলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। স্থলপথে
ইরাক ও ইরান তুর্কিস্তান, খোরাসান, কাবুল, ভারতবর্ষে পৌঁছা যায়। অন্যদিকে
সিরিয়াল হয়ে মিশর তিউনিসিয়া, মরক্কো ও স্পেন পর্যন্ত যাতায়াত করা
যায়। আবার সমুদ্রপথে আফ্রিকা ইউরোপের নানা নগরের যাওয়া যায়। তাছাড়া ভারত বর্ষ সুমাত্রা ও সিম পর্যন্ত সুগম পথ বিদ্যমান।
আরব দেশে বংশগত ও গোত্রগত কৌলান্য প্রথার প্রভাব বিদ্যমান ছিল। এ
বংশমালদা নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে ঘৃণা বিদ্বেষ যথেষ্ট পরিমাণে
বিদ্যমান ছিল।
প্রাচীনকাল হতে তারা নিজেদের বংশ পরিচয় বংশের মূল ও শাখা প্রশাখা বিবরণ
যথাযথভাবে রক্ষা করার জন্য প্রত্যেক সম্প্রদায়ী দুই একজন বেতনভুক্ত বংশ পরিচয়
বিশারদ নিযুক্ত করে রাখতো। তাদের স্মরণ শক্তিও ছিল প্রখর। তারা প্রাচীন থেকে
মধ্যযুগের লক্ষ লক্ষ কবিতা অক্ষরে অক্ষরে মুখস্ত করে রেখেছিল। বাৎসরিক মেলা ও
হজ উপলক্ষে গোত্র বিবরণ ও অভিজ্ঞান প্রকাশ্য সম্মিলনে ক্ষেত্রে নিজেদের
জ্ঞান ও ধীর শক্তির পরিচয় দিয়ে প্রশংসিত হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতায় মেতে
উঠতো।
পবিত্র কাবা ঘরকে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠতম ধর্মমন্দির বলে মনে করত। এ পবিত্র
ঘরের হেফাজতে কাবা স্থিত ঠাকুর দেবতাদের পূজা অর্চনা করা। তাদেরকে ভোগ দেওয়া
হজ যাত্রীদের পানাহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা তাদের নিকট সবচাইতে সম্মানজনক
কাজ ছিল। এই সম্মানজনক কাজের অধিকারী ছিল একমাত্র মক্কাবাসীর বংশবিশেষ। তারা
দাবি করত যে আমরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানিত বংশীয় লোক, হযরত ইব্রাহিম ও
তদীয় পুত্র হযরত ইসমাইল আঃ সালাম আমাদের আদি পুরুষ আবার তারাই ছিলেন পবিত্র
কাবা গৃহের সর্বপ্রথম নির্মাতা। সুতরাং বংশ মজাদার উত্তরাধিকারী উভয়দিকে থেকেই
আমরা এই সেবার অধিকারী। অতএব সেবায়েত ও পুরোহিত হবার অধিকার আমাদের ব্যতীত
অন্য কার থাকতেও পারে না। অন্যান্য বংশের লোকেরা অবনত মস্তকে তাদের মেনে নিত।
আরব জাতি ছিল অপ প্রতিরোধ ও বীরত্বের অধিকারী কোন শক্তির বল বিক্রমের ভয় সংকোচ
কখনো তাদের অন্তরকে স্পর্শ করতে পারেনি। ভয়াবহ রণাঙ্গনকে তারা অত্যন্ত ভালোবাসে
সে সঙ্গে তাদের অন্তরে ছিল অনুষ্ঠিত ভাবে কর্ম সম্পাদনের অদম্য স্পৃহা। এজন্য
তারা শুধু রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে নয় বরং দুনিয়ার সমস্ত জাতি রাজ্যের
বিরুদ্ধে একসঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে সক্ষম ছিল। এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে একদিকে
ভারত এবং অপরদিকে ইস্পেন ও ফ্রান্স পন্থ ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করা সম্ভব
হয়েছিল।
প্রতিটি পরায়ণতা এবং প্রতিবেশীদের জন্য আত্মৎসর্গ করা ছিল তাদের একটি
বিশেষত্ব। অপরিচিত বিদেশি মেহমানের মেহমানদারী করা, জুয়া খেলা, প্রতিযোগিতা এবং
খেলাধুলায় বিজয়ী কে পুরস্কার দিয়ে অথবা ভোজ সবার আয়োজন করে। নিজেদের ধন-সম্পদ
বিলিয়ে দেওয়া এবং আশ্রিত ও আত্মসমর্পণকারীদের সাহায্যে নিজেদের জানমাল উৎসর্গ
করে দেওয়া ছিল তাদের চিরাচরিত প্রথা।
পৃথিবীর সমস্ত অনাচার অবিচারের প্রতিকারও প্রতিবিধান করার জন্য যে মহামানবের আগমন
হবে তার এমন দেশে অভিভূত হওয়া ছিল সমচীন যে দেশ পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সে
দেশের লোকেরা অতি অল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের স্বাধীন চিন্তা চেতনা দ্বারা পবিত্র
ধর্মের সভ্যতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং নিজেদের আল্লাহ প্রদত্ত স্মরণশক্তি বলে
আল্লাহর পবিত্র কালাম এবং রাসূলের অমূল্য উপদেশ কণ্ঠস্থ করে। পৃথিবীর দূর
দূরান্তে প্রত্যেক নর নারীর কর্ণ কূহরে পৌঁছে দিতে সক্ষম। এজন্যই সর্বজ্ঞ আল্লাহ
তা'আলা তাঁর প্রিয় হাবিব সমগ্র জগতের কানকর্তা শেষ নবীকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে
প্রেরণ করেন আরবের মক্কা নগরীতে।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রকৃত জন্ম রহস্য
এমন এক সময় ছিল যখন সমগ্র বিশ্বে একমাত্র মহা প্রভুই ছিলেন। তার গগন, পবন,
মৃত্তিকা, রবি, শশী বলতে কিছুই ছিল না। সর্বত্র কেবল শুধু আল্লাহই ছিলেন। এবং
মহাশূন্যতার মাঝে একাকী না থেকে ইচ্ছে করলেন সেই শূন্যতার অবসান ঘটাবে এই
শুভক্ষণে প্রথমে আল্লাহ পাক তার প্রিয় বন্ধু হযরত মোহাম্মদ সাঃ নুরকে পৃথক
করলেন। যাকে আমরা সাধারণত হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলে ডেকে থাকি। হযরত মোহাম্মদ সাঃ
সৃষ্টি জগতে সর্বপ্রথম পৃথক নুর বা সৃষ্টি নূর। আরশ করসি, লৌহ
কলম, আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য, জিন, ইনসান, বেহেশ, দোজখ, ফেরেস্তা
প্রভৃতি ওই নূরে মোহাম্মদী থেকে সিজন হয়েছে।
মদিনার প্রতি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ভালোবাসা
একদিনের ধাত্রী মাতা হালিমা যখন মক্কা তাকে নিয়ে এলেন তখন তিনি বীরের মধ্যে
হারিয়ে যান। হালিমা অনেক তালাশ করলেন কিন্তু কোথাও তাকে পেলেন না তখন তিনি অতি
ভয়ে আব্দুল মুত্তালিবের কাছে এসে ঘটনাটি খুলে বললেন। আব্দুল মুত্তালিব ঘটনা শুনে
তড়িঘড়ি করে কাবা গৃহে গমন পূর্বক ফিরে পাবার জন্য প্রার্থনা করলেন। এমন সময়
ওয়ারাকা ইবনে নওফেল ইবনে আসাদ এবং অন্য একজন কোরাইশ তাকে পেয়ে নিয়ে এলেন
আব্দুল মুত্তালিব এর কাছে। তারা বললেন আমরা আপনার এই ছেলেকে মক্কার উত্তর
প্রান্তে পেয়েছি।
আব্দুল মুত্তালিব তাকে কাঁধে তুলে কাবা ঘর তাওয়াফ করলেন তাকে হেফাজত রাখার
প্রার্থনা করে মা আমেনার নিকট পাঠিয়ে দিলেন। মা আমেনা ছেলেকে বুকে পেয়ে আনন্দে
হৃদয় ভরে উঠলো। কিছুদিন পর বাসনা করলেন শিশু পুত্রকে মাতৃকুলের সাথে একবার
পরিচয় করাবেন। তাই মদিনার পথে যাত্রা করলেন। তখন হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ৬ বছর
বয়স ছিল। সঙ্গে নিলেন উম্মে আইমান নামে এক চাকরানিকে যাকে রেখে গিয়েছিলেন
স্বামী আব্দুল্লাহ।
এবার মা আমেনা মদিনাকে ভালোভাবে দেখালেন। আরো দেখালেন সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে
তার পিতা আব্দুল্লাহর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। দেখালেন ওই সমাধি স্থান যেখানে
তার পিতা চিরনিদ্রায় শায়িত। শিশু হযরত মুহাম্মদ সাঃ বোঝতে পারলেন তিনি এতিম।
স্নেহময়ী জননী তার শিশু পুত্রকে সেই হৃদয় বেধড়ক দীর্ঘ কাহিনী শুনালেন কিভাবে
তার পিতার সমাধি এখানে হলো। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার এই বয়সে প্রথম মায়ের
সাথে মদিনা এসে এসব করুন কাহিনী অবগত হলেন। আর সারা জীবন তার সাথীদের কাছে এই
কাহিনী বোঝাতেন কেন তিনি এই মদিনাকে এত ভালবাসেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর অভিভাবক চাচা আবু তালিব
আব্দুল মোতালেব তার মৃত্যু শয্যায় শিশু মুহাম্মদ সাঃ এর অভিভাবক হিসেবে আবু
তালিব এর ওপর দায়িত্ব দিলেন। আবু তালেব ভাতিজাকে অনেক ভালোবাসতেন। কারণ হযরত
মুহাম্মদ সাঃ এর আট বছর বয়সে তার বিবেক, বিবেচনা, বাধ্যতা, উদার, হৃদয়,
বুদ্ধিমত্তা ও মহত্ত্ব সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। আবু তালেব এখন থেকে রাসুল
করিম হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর অভিভাবক। আবু তালিব মুসলমান হয়নি কিন্তু সারাটি
জীবন রাসূলকে পিতার মতো রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। আবু তালেব মুসলমান না হওয়ার
পরও রাসূল করীম হযরত মুহাম্মদ সাঃ কোনদিন তার প্রতি মন ক্ষুন্ন হননি বা
কোনরকম কোন ভাব দেখাননি। বরঞ্চ রাসূল করীম হযরত মুহাম্মদ সাঃ সর্বদা অন্তর
দিয়ে চাচা আবু তালেবকে শ্রদ্ধা করতেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মেষ চরান
হযরত মুহাম্মদ সাঃ যখন তার চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাধানে ছিলেন। তখন তিনি
তার চাচার অবস্থা সচ্ছল না থাকাও মেষপালণ করতেন। পৃথিবীতে যত নবী রাসূলের
অবিভাব ঘটেছে এদের মধ্যে প্রায় নবীগণই মেষপাল চড়াতেন। ওই সময়কার মানুষের
জীবন জীবিকার একমাত্র উপায় ছিল মেষ, ভেড়া, উট পালন করা এদের দুগ্ধ পান করা।
কাজেই আল্লাহর দুধ হযরত হযরত মুহাম্মদ সাঃ উন্মুক্ত মরুপান্তরে পালা কমে মেষ
চড়াতেন। পরবর্তী সময় দেখা যায় যে তার শিষ্যরা তাকে পাকা জাম এনে দিলে তিনি
আনন্দচিত্রে গ্রহণ করে খেতেন কালো জাম ছিল খুব সুস্বাদু। এই জাম মেষ চড়ানোর
সময় খাওয়া অভ্যাস করেছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ মক্কা জীবন
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ চাচা আবু তালেবের সাথে মক্কায় থাকতে লাগলেন।
তিনি সকল কাজকর্মে চাচাকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। তিনি চাচার সাথে মক্কার হজ
যাত্রীদের পানি পান করাতেন। তিনি হজ যাত্রীদের সমাবেশ লক্ষ্য করতেন। সেখানে
অসংখ্য গোত্রের লোকজন এসে সমবেত হতো। কোন কোন গোত্রে তাদের নিজেদের মহত্ব
প্রকাশ করতো আপন কাব্য শক্তি দ্বারা আবার কোন কোন গোত্র মহত্ব প্রকাশ করত
আতিথেয়তার দ্বারা। এমনভাবে প্রত্যেক গোত্রে আপন আপন মহত্ত্ব নানা কৌশলে দেখে
থাকতো। রাসুল করিম হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিরবে এসব দেখতেন ও শুনতেন। এভাবে রাসূল
করিম হযরত মুহাম্মদ সাঃ সমগ্র আরবের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার
অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রথম যুদ্ধ ৫৮৪ সাল থেকে ১৪ বছর বয়স
আরবগন আদি থেকে যুদ্ধ প্রিয় জাতি। তবে বছরের কয়েকটি মাসকে তারা পবিত্র মনে করে
এসব মাসে কোন প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ করত না। সেই মাসগুলি হলো মহরম সফর জিলকদ, জিলহজ
প্রথম ও দ্বিতীয় একাদশ ও দ্বাদশ মাস কিন্তু বিশেষ কারণবশত ফিজর যুদ্ধ দ্বিতীয়
মাসে সংঘটিত হয়েছিল।
বনু হাওয়াজিন গোত্রের নোমান বিন আল মুঞ্জির নাম এক ব্যক্তি প্রত্যেক বছর ও কাজ
নামক স্থানে একটি মরুযাত্রীদল পাঠাতো। এই সময়ে উরওয়ার নেতৃত্বে একটি দল
পাঠিয়েছিলেন। উরওয়া যখন পথের মধ্যে তখন কুরাইশ গোত্রের বার্ধ নামক এক ব্যক্তি
তাকে হত্যা করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মক্কা অদুরে উভয় গোত্রে তর মূল যুদ্ধ
হয়।
দীর্ঘ চার বছর এই যুদ্ধ চলতে থাকে। ফিজর যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের বাবা হারব
মৃত্যুবরণ করেন। এই সময় হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বয়স ছিল মাত্র পনেরো বছর। এই
যুদ্ধে আবু তালিব ছিলেন বনু হাশেম গোত্রের প্রধান। এ যুদ্ধে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর
প্রধান কাজ ছিল শত্রুপক্ষের যে সব তীর নিক্ষেপ হতো সেগুলি একত্র করে চাচা আবু
তালেবের হাতে তুলে দেওয়া। এই যুদ্ধে তিনি কাউকে আঘাত করেননি এবং নিজেও আঘাত
পাননি এর যুদ্ধে তিনি বিরাট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন যা পরবর্তী জীবনে কাজে
লেগেছিল।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বিবাহের সময়
ঘটক নাফিসাঃ বিয়ে শাদী করছেন না কেন ?
হযরত মুহাম্মদ সাঃ আমার কি আছে যে আমাকে বিয়ে করবে?
নাফিসাঃ থাক না থাক তাতে কিছুই আসে যায় না আপনাকে যদি আমি পড়তে পরমা
সুন্দরী মহিলা তার মত ভালবাসা ও ধন সম্পদ সহ আমন্ত্রণ করেন তাতে আপনার বক্তব্য কি
?
হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে সেই মহিলা?
নাফিসাঃ বিবি খাদিজা।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ আমি কি করে এগোতে পারি।
নাফিসাঃ ওটা আমার কাজ।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাহলে আমি চাচা আবু তালিব এর সাথে আলোচনা করে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ বুঝতে পেরেছিলেন যে খাদিজা তাকে ভীষণ ভালোবাসেন। তিনি কখনো কোন
ইঙ্গিত দেননি। খাদিজা আরবের অনেক ধন সম্পদশালী পরিবারের দুলালদের প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যান করেছেন। নাফিসার মুখে রাসূল করিম হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর মুখের বাক্য
শ্রবণ করে বিবি খাদিজাত কাল বিলম্ব না করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। খালি বিগত
পিজোর যুদ্ধে পরলোক গমন করেন তাই তার চাচা বিয়ে দেন এই বিয়ের পর থেকে হযরত
মুহাম্মদ সাঃ এর আর এক নতুন জীবনের অধ্যায় শুরু হয়।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হেরা গুহায় মোরাকাবারত
মক্কার দু মাইল অদরে হেরা নামে একটি পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবছর রমজান
মাসে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই গুহায় ধ্যানমগ্ন হয়ে কাটাতেন। এটাকে জাবালে নূর বলে
অভিহিত করা হয়। আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাঃ সেখানে উপবাস করতেন।
স্রষ্টার প্রার্থনায় মশগুল থেকে এতই উন্নতি হতেন যে কারণে সৃষ্টির সবকিছু অজ্ঞাত
অচেনা হয়ে যেত। এমনকি স্বয়ং নিজেও।
মহা সত্যের উপলব্ধি, তথ্য জ্ঞান লাভ এবং কে এই ধারাধামের স্রষ্টা, কে
এই নীলাব্যোম, কে এই শিলা, নদনদী, শশী, রবি নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন
এবং নির্ধারিত গতিপথে চলার আইন প্রণয়নে নির্দেশ করলেন। কে দিবা রজনীর
সৃষ্টিকর্তা এসব জিজ্ঞাসা নিয়ে মন অস্থির রাখতেন। এসব প্রশ্নোদ্ধায় রাসূল করিম
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পূর্ণতায় উদ্ভাসিত হতে লাগলো আপন প্রভুর মহিমা হতে। তিনি
কল্পনার অনর্বে ঝাঁপ দিয়ে বুঝতে চাইতেন কে এসবের জন্মদাতা আর কে বা এদের প্রলয়
ঘটায়।
তিনি বারবার এসব প্রশ্নের উত্তরে নিরাশ হতে কিন্তু আবার কে যেন একই প্রদেশে নিয়ে
যেতেন। তিনি তার প্রিয়তমা বিবি খাদিজার কাছে বর্ণনা করতেন। বিবেক খাদিজার
বিশ্বাস ছিল তাই স্বামীকে উৎসাহ দিতেন মহা সত্যের সন্ধানে নিবিড় ভাবে আত্মনিয়োগ
করলেন হযরত মুহাম্মদ সাঃ। যে সময় রাসূল রূপে নির্জন সাধনায় পবিত্র হলেন তখন তার
বয়স ছিল 40 বছর।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কোন কোন পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন কেউ বলেছেন, তিনি বিধাতার
প্রবর্তিত বিধি অনুসারে চলেছিলেন। কেউ বলেন, তিনি পূর্ণবান ঈষার প্রবর্তিত ধর্মের
অনুসরণ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি মহাত্মা মুসার বিথির অনুগত ছিলেন। অন্য
কেউ কেউ বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাঃ পূর্ণতা নূহের অনুসারী ছিলেন বলে সিদ্ধান্ত
করেছেন। অনেকের মতে, তিনি নিজেই ধর্ম ও প্রবর্তক কিন্তু অন্যান্য প্রেরিত
পুরুষদের ধর্মমত মান্য করে চলেছেন। তবে এটা ধর্ম মত মহাজন্দের স্থির সিদ্ধান্ত।
বস্তুত জগতের যাবতীয় নবী পয়গম্বর এর একই ধর্ম ছিল। সেই ধর্মের নামই ইসলাম। হযরত
মুহাম্মদ সাঃ ইসলাম ধর্মের অনুগামী ছিলেন। ইসলাম ধর্মে আল্লাহর একমাত্র মনোনীত
ধর্ম। হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইসলামের অনুগামী ছিলেন। ইসলাম ধর্ম আল্লাহর একমাত্র
মনোনীত ধর্ম।
তিনি অনেক সময়ে এরূপ লোক সংসর্গ পরিত্যাগ করে নির্ভুত হেরা-গহবরে গভীর চিন্তায়
মগ্ন থাকতেন। কমে সে নির্জন প্রদেশে আল্লাহর জ্যোতি ও একত্ববাদের গৃঢ়তত্ত্ব তার
অন্তরের প্রকাশিত প্রতিফলিত হতে লাগলো। হৃদয় দর্পণ হতে নিষ্কাশিত হল। স্বর্গীয়
আলোকের বিকাশে মনের অন্ধকার পলায়ন করল। তিনি সংসার বন্ধন ছিন্ন করে জনসর্গ থেকে
দূরে অবস্থান করলেন। লোকেরা লক্ষণ বুঝে পরস্পর বলতে লাগলেন যে অবশ্যই হযরত
মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর প্রেমের আকৃষ্ট হয়েছেন। এদিকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর
সাধনবারি স্বীয় হৃদয়কে অনুক্ষণ স্নিগ্ধ ও সতেজ রেখেছিলেন। প্রেমের পতাকা অনুরাগ
ভুমিতে উন্মোচন করেছিলেন। তার সিদ্ধান্ত প্রশান্ত চিত্তে অনুপ্রেরণা লক্ষণ স্পষ্ট
প্রকাশ হতে লাগলো। স্বর্গীয় দূত জিব্রাইল পবিত্র কুরআন শরীফে বাক্য দ্বারা
অন্তরকে অলংকৃত করতে লাগলেন। স্বর্গীয় দূত কখনো মানস্যকারে কখনো বা পক্ষ যুক্ত
স্বর্গীয় আকৃতি বিশেষ এসে বাণী শোনাতেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ইসলামী দাওয়াতের প্রচার
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপর ওহী নাযিল হয় তখন প্রকাশে ভাবে দ্বীন প্রচারের জন্য
তিনি অদৃষ্ট হননি। বরং এতে শুধু রাসুল করিম হয় হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ব্যক্তিগত
আমলের জন্য আহকাম ছিল। এরপর কিছুদিন ওহি নাযিল বন্ধ থাকার পর যখন দ্বিতীয়বার ওহী
নাযিল আরম্ভ হলো তখন এতে হযরত মোহাম্মদ সাঃ কে ইসলাম প্রচারের জন্য নির্দেশ
দেওয়া হল কিন্তু দুনিয়াতে তখন মূর্খতা ও গোমরাহী রাজত্ব বিদ্যমান। বিশেষ করে
আরবদের অহংকার ও গৌরব এবং পূর্ব পুরুষদের অনুসরণ তাদেরকে সত্যের আওয়াজে কান
লাগানোর আমল করার কখনোই সুযোগ দিত না।
হিকমতে ইলাহির উদ্দেশ্যে এই যে রাসূল করিম হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে ইসলাম প্রচারের
জন্য প্রথমেই নির্দেশ দেওয়ার কারণ। যেন প্রথম হতেই এর প্রতি মানুষের বিদ্বেষ না
জন্মে। সুতরাং হযরত মোহাম্মদ সাঃ প্রথমত ইসলামের দাওয়াত পরিচিত এবং সে সমস্ত
লোকদের মাঝে শুরু করেন যাদের ওপর তিনি বিশ্বাস করতেন অথবা তিনি দূরদর্শিতার
মাধ্যমে তাদের মাঝে কল্যাণ ও মঙ্গলের চিহ্ন দেখাতেন।
পবিত্র কুরআনের আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন,
হে আপনার রাসূল আপনি নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের সতর্ক করে দিন এবং অনুসারী মুমিনদের
প্রতি সদয় হন। যদি আপনার অবাধ্যতা পোষণ করে তবে বলে দিন তোমরা যা করো তা থেকে
আমি মুক্ত। (সূরা শোয়ারা ২১৪- ২১৬)
ভাই হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু এর রাসুল করীম হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর পালক পুত্র হযরত
যায়েদ বিন হারিসা রাঃ ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আবু বকর রাঃ নবুওয়াতের পূর্বের
হুযূর হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দাওয়াত সত্য বলে বিশ্বাস করলেন এবং কালিমা সাদত পরে
মুসলমান হয়ে গেলেন।
হযরত আবু বকর রাঃ তার গোত্রের মধ্যে সবার নিকট সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। সমস্ত
ব্যাপারে লোকেরা তার উপর বিশ্বাস করে। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ওই সমস্ত লোকদের
ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন। যাদের মধ্যে কিছু কল্যাণ ও মঙ্গলের কিছু
চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং হযরত ওসমান গনি রাঃ হযরত আব্দুর রহমান বিন
আউফ রাঃ এবং তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রাঃ তার দাওয়াত কবুল করলেন। তিনি
সবাইকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর খেদমতে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে তারা সকলে মুসলমান
হয়ে গেলেন।
এরপর আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ, উবায়দা ইবনুল হারিস বিন আব্দুল মুত্তালিব,
সাঈদ বিন আদভি, আবু সালমা মাখযুুমী, খালিদ বিন সাঈদ ইবনুল, উসমান
বিন মাজউন, এবং তার দুই ভাই কুদামা ও উবায়দুল্লাহ, আরকাম বি ন আরকাম
রাঃ, আবু যরর গিফারী রাঃ, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ ইসলাম গ্রহণ করেন।
ওই সময় পর্যন্ত ইসলামের দাওয়াত গোপনে চলছিল। ইবাদত ও শরীয়তের আমলে গোপনে পালন
করা হতো। এমনকি পুত্র হতে এবং পিতা পুত্র হতে লুকিয়ে নামাজ পড়তেন। যখন
মুসলমানদের সংখ্যা ত্রিশর্ধ্ব হয়ে গেল তখন রাসূল করীম হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাদের
জন্য একটি প্রশস্তঘর নির্মাণ করলেন যেখানে সবাই একত্রিত হয়ে এবং হুজুর হযরত
মোহাম্মদ সাঃ সেখানে হাজির হতেন।
এভাবে ইসলামের দাওয়াত ৩ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে এই সময় কুরাইশদের এক বিশেষ
জামায়েত ইসলাম গ্রহণ করে। এরপর আরো অন্যান্য লোক ইসলাম গ্রহণ করা শুরু করে। এ
খবর মক্কায় ছড়িয়ে পড়ে জনগণের মাঝে বিভিন্ন জায়গায় তা আলোচনা হতে থাকে। তাই
এখন প্রকাশ্যভাবে সত্যের দাঁতে পৌঁছানোর সময়ে এসে গেছে।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সময় কুরাইশদের অত্যাচার নির্যাতন অনিশ্চয়তা
মক্কা নগরের সকল পরিবারের কেউ না কেউ হয়তো হযরত মুহাম্মদ সাঃ প্রসারিত
ইসলাম ধর্মের অনুরাগী হয়ে পড়েছে। দেখে অধিকাংশ পরিবারের প্রধান গত এই সত্য
ধর্মের মূলৎপাটনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো। হযরত মুহাম্মদ সাঃ
এর বংশের মধ্যে যারা প্রভাব সম্পন্ন ও সম্পদশালী ছিলেন বিপক্ষরা তাদের
পাননাশের হুমকি প্রদান করেও তা পারল না বটে। কিন্তু নানা প্রকার অত্যাচার
উৎপাদন করে বিপর্যস্ত করে তুলছিল। আর যারা নিরাশ্রয়ী তাদের তো কথায় ছিল না।
এ সকল ধর্মপ্রা মুসলমানদের ওপর যে সকল অকথ্য অমানসিক অত্যাচার করেছিল তা
স্মরণ করলে আজও হৃদপিণ্ড কম্পন হয়।
আজও সে অত্যাচার স্মরণে চোখের জলে বুক ভেসে যায়, দুর্বৃত্তরা হযরত
মুহাম্মদ সাঃ এর নিরাশরায় সাহাবীগণকে বলপূর্বক মরুভূমিতে নিয়ে গিয়ে
উত্তপ্ত বালুকার মধ্যে প্রাণ বিনাশ করত। কোথাও অনাহারে আবদ্ধ করে কবরস্থ করে
দারুণ যন্ত্রণা দানে হত্যা করা হতো। দুগ্ধ পোষ্য শিশুদের কে মাতৃকোল থেকে অপহরণ
করে অতি নিষ্ঠুরতার সাথে হত্যা করত। তার উত্তপ্ত নির্দোষ রক্তধারা তার মাতা
পিতা মুখের মধ্যে নিক্ষেপ করে উক্ত সত্য ধর্মত্যাগ করতে বাধ্য করার চেষ্টা করত।
আবার কখনো হাত-পা বেঁধে পখর রোদে ঊর্ধ্বমুখে দণ্ডায়মান রেখে বেতা-ঘাত করত।
দারুণ তৃষ্ণায় হতভাগ্যরা যখন পানি পান বলে চিৎকার করে তখন ধর্মদেশী
পারসেন্টেরা সেই হৃদয়বিদারক চিৎকার শুনে স্বাভাবিক সিদ্ধ অমানসিকতার পরিচয়
দিয়ে তাকিয়ে দেখত না।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই ভীষণ অত্যাচারে সত্ত্বেও এর জন্য সত্য ধর্ম ইসলাম
ত্যাগ করেনি। অনেকেই ধর্মত্যাগ অপেক্ষা প্রাণ দান উত্তম বিবেচনা করে সাহসে
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল। যাদের হৃদয় ধর্মের আলোক উজ্জ্বল শারীরিক অত্যাচার
তাদের নিকট এই শাস্তি । আল্লাহর শক্তি বলে বলিয়ান না হলে কি কেউ এত অত্যাচার
সহে। সুমাইয়া নামে এক ধর্ম পরায়ণা পূর্ণ ভর্তি ক্রীতদাসী পান দান করে মহত্বের
পরিচয় দিয়েছিলেন। নির্মম হৃদয় আবু জেহেল সুমাইয়াকে ইসলাম ত্যাগ করার অভির
পায়ে ভীষণ যন্ত্রণা দিয়েছিল কিন্তু যখন এই রমণী কিছুতে ধর্ম ত্যাগ করেনা তখন
আবু জেহেল তার সহস্রে সুমাইয়ার গুপ্তাঙ্গে আঘাত করে শহীদ করেছিল। দেখতে দেখতে
সুমাইয়া পরম করুণাময় পবিত্র স্বর্গে যেখানে হিংসা বিদ্বেষ নেই, যেখানে পাপ
পণ্য নেই, যেখানে নৃত্য শাস্তি বিরাজিত নেই, যেখানে সেই পূর্ণ দামে আশ্রয়
গ্রহণ করলো ধর্মের নামে ইহাই নিরা কুলের প্রথম শহীদ।
এই ঘটনার পর মক্কা কুরাইশের হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সকল সাহাবীর উপরে
অল্পবিস্তার অত্যাচার করেছিল। সত্য কিন্তু বেলাল নামক একজন ক্রীতদাসের উপর
অত্যাচার ছিল সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর। বেলালের মাতার নাম হামামা, পিতার
নাম বেয়াহা। বাল্যকাল হতে বেলাল ক্রীতদাস রূপে উবাহ ইবনে খলফের পত্র উম্মীমার গৃহে
দাসত্ব করছিল। বেলাল ক্রীতদাস হলেও উম্মিয়া তাকে অত্যন্ত ভালবাসত এবং ধর্ম
মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের ভার তার উপর দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ পাকের কৃপায় বেলাল
পত্তলিকতা ত্যাগ করে একাদশ্যবাদী হয়ে পড়েছিলেন। তিনি নিরবে বিবৃতি বসে একমাত্র
আল্লাহর নামে জিকির করতেন।
ঘটনাচক্রেও উম্মিয়া এ ব্যাপারটা অবগত হয়ে একদিন বেলালকে জিজ্ঞেস করল হে
বেলাল তুমি কি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ধারে বিশ্বাসী হয়েছো। বেলাল বললেন একমাত্র
আল্লাহু আমার উপাস্য। এ ধরনের উত্তর শুনে উম্মিয়া ভয়ানক ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে
নানা প্রকারের নীপিড়ন করতে লাগলো। তখনকার সময়ে প্রখর তাপে বেলালকে উলঙ্গ করে
হাত পা বেঁধে মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর স্টপে শুয়াইত করে ভারি ভারী পাথর তার বুকের
নিক্ষেপ করতে লাগলো। এরূপ যন্ত্রণা দিয়ে বেলালের মন ফেরাতে পারলো না কিছুতেই
তিনি ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করাতে পারলেন না। সেই ভয়ানক যন্ত্রণার মধ্যে বেলাল
বললেন আল্লাহ এক আমি তার উপাসনা করি।
অন্য একদিন উম্মিয়া বেলালকে ধরবিসহ যন্ত্রণা দিয়ে বলল হে বেলাল তুই
বল লাত দেবতার প্রতি বিশ্বাস করলাম। উত্তরে বেলাল বললেন লাত দেবতার প্রতি আমার
কোন বিশ্বাস নেই। তাতে উম্মিয়ার ক্রোধ আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেল। হঠাৎ সে বেলালের
বুকের উপর পা রেখে তার কন্ঠনালী চেপে ধরল তাতে বেলালের নিঃশ্বাস অবরুদ্ধ হয়ে গেল
তিনি স্পন্দনহীন হয়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।
অন্য একদিন নরাধম উম্মিয়া অনেক রেগে বেলালের গলার সাথে দীর্ঘ রশ্মি বেধে উচু ভূমি থেকে নিম্ন ভূমিতে
টানতে লাগলো। তাতে বেলালের শরীল বিশেষত গলা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল। এমন সময়
হঠাৎ উপস্থিত হলেন। বেলালের এই হৃদয় বিদারক অবস্থা দেখে তার মন আকুল হয়ে
উঠলো। তিনি উম্মিয়াকে বললেন হে উম্মিয়া এই দিনহীন ক্রীতদাসকে এরূপ যন্ত্রণা
দিয়ে তোমার কি লাভ কি হচ্ছে। ওকে আর যন্ত্রণা দিও না। তখন বলল বেলাল আমি ক্রয়
করে এনেছি সুতরাং আমি শাস্তি দেওয়ার অধিকারী। তুমি এখানে এসে না গলানোর
কে।
হযরত আবু বক্কর রাঃ বললেন আল্লাহ ব্যতীত যার কোন উপাস্য নেই তাকে কেমন ভাবে
অত্যাচার করো না। উম্মিয়া শুনে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল হে আবু বক্কর তুমি সকল অনিষ্টের মূল। তুমি ওকে
প্রতিমা পূজা করতে নিষেধ করেছে। এখনই তুমি ওকে রক্ষা কর। যদি তোমার এত দয়া
লাগে তাহলে ওকে ক্রয় করে নাও। হযরত আবু বকর রাঃ উম্মিয়া কথা শুনে পরমানন্দে বেলালকে দশটি স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময় গ্রহণ করে
নিলেন। উম্মিয়া তখন বললেন, হে আবু বক্কর তুমি নির্বোধের মতো কাজ করছো। এই কারফি
দাস কে এত অধিক মূল্যে ক্রয় করে নিজেই ক্ষতি করলে। এক মুদ্রার বিনিময়ে ওকে
বিক্রয় করতে প্রস্তুত ছিলাম।
তখন হযরত আবু বক্কার রাঃ বলেন, আমার যথেষ্ট লাভ হয়েছে। এর বিনিময়ে
আমার সমস্ত সম্পত্তি দান করতে প্রস্তুত ছিলাম। এই বলে তিনি নিজের জামা দ্বারা
বেলালের দেহের ধূলী ও ময়লা ছেড়ে পরিষ্কার করলেন। পরে হয়তো হযরত মুহাম্মদ সাঃ
এর নিকট নিয়ে এসে প্রতিবেশীদের সম্মুখে বললেন, হে প্রতিবেশীগণ আমি বেলালকে
আল্লাহর উদ্দেশ্যে দাসত্ব হতে মুক্ত করলাম পরে বেলাল রাসূল করিম হযরত মুহাম্মদ
সাঃ এর বিশেষ প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। রাসুল করীম হযরত মুহাম্মদ সাঃ
বেলালকে মোয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত করলেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ মদিনায় মুনাওয়ারায় মসজিদে নবুবী নির্মাণ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহ পাক থেকে প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে একটি মসজিদ
নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের চেষ্টা করলেন। সে স্থানে তার উষ্ট্র
কসওয়া ভুতলে শায়িত হয়েছিল তিনি সেই স্থানটি উপযুক্ত স্থির করে ভূমির মালিক
সন্ধান করতে লাগলেন। অনুসন্ধান করে জানতে পারলেন জমিটির বর্তমান মালিক সহল ও
সহিল নামক দুই ভাই পিতৃহীন ২ নাবালক। বালকদের পিতার নাম রাফেয়া।,
পিতৃহীন তাই আসাদ নামক এই সুপন্ডিতের তত্ত্বাবধানে থেকে সুশিক্ষা লাভ
করেছে। হযরত মুহাম্মদ সাঃ মদিনাতে আগমনে পূর্বে এই আসাদই নামাজের সময় সত্য
ধলম্বীদের ইমামের কার্য করতেন।
বিদায় হজে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ভাষণ
হে জনতা, আমার কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শোন, আমি জানি না, এবারের পর তোমাদের
সঙ্গে এ জায়গায় আর একত্র হতে পারব কি না। হে মানবমণ্ডলী, স্মরণ রাখ, তোমাদের
আল্লাহ এক, তার কোনো শরিক নেই। তোমাদের আদি পিতা একজন, অনারবদের ওপর আরবদের
কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।
আরাফাতের পূর্ব দিকে নামীরা নামক স্থানে মহানবীর তাবু করা হয়েছিল। নীল গগনের
উত্তপ্ত সূর্য সামান্য একটু পশ্চিমে হেলার পর তিনি তার উষ্ট্র
আরোহনপূর্বক উপত্যকার মধ্যস্তরে পৌঁছেই তার পবিত্র মুখ থেকে উচ্চারিত করতে
লাগলেন। তার প্রতিটি বাণী হয়তো রাবেয়া-বিন-অমিয়া-বিন খালফ কর্তৃক পুনরাবৃত্ত
হয়েছিল তিনি মহাপ্রভুকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মেরাজের সময়কাল
ঐতিহাসিক মেরাজের ঘটনা কখন ঘটেছে? তা নির্ধারণের যদিও বিভিন্ন মতের
উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু দুটি বিষয় সবার ঐক্যমত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক মদিনা
হিজরতের পূর্বে মেরাজের ঘটনা ঘটেছে। দুই হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাঃ এর
ইন্তেকালের পর ঘটেছে। নবুওয়াতের ত্রয়োদশ বরষে হিজরত অনুষ্ঠিত হয় এবং
সহীহ বুখারীতে হযরত আয়েশা রাঃ এর রেওয়ায়েতে অনুযায়ী হিজরতের তিন বছর পূর্বে
এবং অপর এক রেওয়ায়েত অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পূর্বে হযরত
খাদিজা রাঃ ইন্তেকাল করেন। সুতরাং মেরাজের ঘটনা হিজরতের পূর্বকার তিন
বছরের মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকবে।
ইতিহাস ও সিরাতের গ্রন্থ সময়ে দেখা যায়। যে মেরাজ এবং হিজরতের মাঝখানে কোন
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্তমান নেই এবং গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলে এই দুটি
ঘটনার মধ্যে গভীর সম্পর্ক ও সংযোগ লক্ষ্য করা যায়। অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায়
মেরাজের ঘটনা হিজরতের ঘটনা নিকটতম যোগে সংঘটিত হয়েছে এই ঘটনা মূলত হিজরতের
ভূমিকা ছিল।
মুহাম্মদ ইবনে সাদ তার তাবাকাত গন্থে এবং ইমাম বুখারী সহীহ জামে গ্রন্থে
মেরাজ ও হিজরতের ঘটনা এজন্য পাশাপাশি বর্ণনা করেছেন। এবং এত দুভাইয়ের মাঝখানে
অন্য কোন ঘটনা প্রবেশ করেননি। যেসব লোক ইমাম বুখারীর গ্রন্থের অনুচ্ছেদ সমূহ
এবং ভাষার সূক্ষ বিন্যাসের সাথে পরিচিত এবং তার বোধশক্তির গভীরতা সম্পর্কে তারা
জানেন। যে তার ঝোক হচ্ছে এই যে উল্লেখিত ঘটনা দুটির মধ্যে সময় এবং সম্পর্ক
উভয় দিক থেকে একান্ত নিকট্য বিদ্যমান।
এরপর মাস এবং দিন তারিখ নির্ধারণে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে রজব মাসে 27 তারিখে
নিয়ে এ কোন দ্বিমত নেই। ইমাম নববী এবং আব্দুল গনি মুক্তাদীস এর মতে প্রসিদ্ধ
মহাদিগনের মতে তা ছিল রজব মাস এবং শেষোক্ত জনের মধ্যে 27 তারিখ তিনি আরো দাবি
করেন যে পরবর্তী আলেমগণদের মধ্যে সব সময় ওই তারিখ সম্পর্কে ঐক্যমত্ত
প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সর্বশেষ কথা
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের পোষ্টের সকল প্রশ্নের উত্তর উপরে আলোচনা করা
হয়েছে। আশা করি আজকে আপনাদের হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন কাহিনী সম্পর্কে
বিস্তারিত জানাতে পেরেছি। এ বিষয়ে আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের অবশ্যই
কমেন্টে মাধ্যমে জানাবেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য
ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url