গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩
গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩ - আমাদের দেশ বাংলাদেশ
ছয় ঋতুর দেশ। এর মধ্যে একটি হলো গরমকাল। শীতের শেষ গ্রীষ্মের শুরু আসে গরমকাল।
গরম কাল আসলে মানুষের একটাই টেনশন আর সেটি হল গরমে ঘেমে যাওয়া। পৃথিবীতে প্রায়
সব মানুষ গরমে ঘামে। কেউ একটু বেশি ঘামে আবার কেউবা একটু কম ঘামে। তবে সবচাইতে
অস্বাভাবিক ব্যাপারটা হলো এই যে ঘামে শরীর দুর্গন্ধ হয়ে যায়। তবে অনেকেরই আছে
যাদের গরমে ঘামের দুর্গন্ধ অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যায়। তার আশেপাশে মানুষের
বিব্রতকর ও খারাপ বোধ করে। ফলে সেই ব্যক্তি লজ্জার সম্মুখীন হয়। আমাদের মধ্যে
অনেকে আছে যারা গরমে ঘামে দুর্গন্ধ দূর করার উপায় সম্পর্কে জানেনা। আজকে তাদের
জন্য আমাদের পোস্টে গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩ সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য সাজিয়েছি। তাহলে কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক, গরমে
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ঘামের দুর্গন্ধের জন্য বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
আজকে তাদের জন্য গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩ সম্পর্কে সকল
তথ্য তুলে ধরেছি। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার
ঘরোয়া উপায় ২০২৩ সম্পর্কে জেনে নিন।
পেজের সূচিপত্র
গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩
গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় উপস্থাপনাঃ আমাদের শরীরের
পাতলা একটি অংশের নাম হল চামড়া। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় বলা হয় ত্বক। ত্বকের
স্বাভাবিক কাজ হল বাইরে তাপের সঙ্গে শরীরে তাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
আমাদের শরীরে সাধারণ তাপমাত্রা 98.4 ডিগ্রী ফরেনহাইট। এই তাপমাত্রার সঠিক
পরিমাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে ঘামগ্রন্থি। আমাদের দেহে অনেকগুলো স্বাভাবিক কোষ
আছে তাদের মধ্যে কোন কোন কোষ রস বা হরমোন ছড়ায়। আরে হরমোন কোষ গুলাই হলো
গ্রন্থি। আর গ্রন্থির মাধ্যমে ঘাম ছড়ায় বলে একে ঘামগ্রন্থি বলা হয়।
বিশ্বজ্ঞদের মতে জানানো হয়েছে, ঘাম গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে মগজ বা
মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক দেহকে নির্দেশ করে যে কতটুকু ঘামগ্রন্থি থেকে ঘাম ধরতে হবে।
কতটুকু ঘাম ঝরে আমাদের শরীরে তাপমাত্রার 98.4 ডিগ্রী ফরেনহাইট থাকবে। আমাদের
শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে অনেক দুর্গন্ধ
ছড়াতে পারে। আর তাই অতিরিক্ত ঘাম ছাড়া থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। গরমে
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো।
ঘাম কি - ঘাম কেন হয়
ঘাম কিঃ ঘাম হলো একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন
মানুষের শরীরে দৈহিক গঠনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়। বিশেষজ্ঞের মতে, সাধারণত
ঘামকে এক্রিন বলা হয়। গরমে মানুষের শরীরের অধিক তাপমাত্রার কারণে সোডিয়াম বা
নোনতা জৈবিক তরল যা সাধারণত রক্তের তরল অংশ থেকে নিঃসৃত হয় ঘাম। আমাদের শরীরে
বিভিন্ন অংশের গ্রন্থি থেকে ঘাম বের হয়।
ঘাম কেন হয়ঃ অনেক সময় অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীরে স্বাভাবিক
তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য আমাদের শরীর দিয়ে ঘাম বের হয়। এছাড়াও একজন ব্যক্তির
জ্বর, থাইরয়েড, মেনোপজ, নার্ভাসনেস এবং হার্ট সংক্রান্ত রোগীরা তাপমাত্রার
অধিক তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তাদের শরীর দিয়ে ঘাম বের হয়।মানুষ যখন জন্ম গ্রহণ
করে তখন তার শরীরে ২০ থেকে ৪০ লাখ ঘামগ্রন্থি থাকে। মেয়েদের শরীরে এই
ঘামগ্রন্থির সংখ্যা আবার একটু বেশি থাকে। আবার ছেলেদেরও ঘামগ্রন্থি গুলো সক্রিয়
থাকে বেশি। তবে একজন মানুষ কতটুকু ঘামবে তার মূলত তার শরীরের ঘাম গ্রন্থীর ওপর
নির্ভর করে থাকে। ঘাম আমাদের শরীরের জন্য ভালো কিন্তু কখনো কম ঘাম অথবা কখনো বেশি
ঘামে এরকম হলে আমাদের শরীরের জন্য একটি চিন্তনীয় বিষয়। এমন অবস্থায় যদি কখনো
দেখা যায় তাহলে অবশ্যই আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘামের দুর্গন্ধ কেন হয় ?
ঘামে দুর্গন্ধ কেন হয়ঃ মানুষের শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে
তরল উপাদান বের হওয়ার ফলে ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। ত্বকের উপর থেকে লেগে থাকা
এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তির কারণে ঘামের দুর্গন্ধ হয়। আবার কখনো দেখা যায়
বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় অতিরিক্ত ঘামের দুর্গন্ধের কারণে। অতিরিক্ত ঘামের
কারণে আমাদের শরীরের ছত্রাক জনিত সংক্রমণ রোগের দেখা দিতে পারে। এছাড়া আমাদের
শরীরে মৌলিক কারণে ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
- মানসিক দুশ্চিন্তার করা
- পেঁয়াজ রসুনযুক্ত খাবার বেশি খেলে
- অতিরিক্ত মসলাদার যুক্ত রান্না করা খাবার খেলে
- মদ্যপান বা সিগারেট অ্যালকোহল সেবন করলে
- বেশি লবণযুক্ত খাবার খেলে
- শরীরের চর্বি বৃদ্ধি পেলে
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়ঃ অতিরিক্ত ঘামের দুর্গন্ধের কারণে
আমরা অনেক বিভ্রান্তর মাঝে পড়ে যায়। আমরা নিত্যদিন নানা মসলাযুক্ত খাবার,
কফি, অ্যালকোহল সেবন আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করে থাকি। এর ফলে শরীরে
তাপমাত্রা পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আসলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আমাদের শরীরে
দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম বের হয়।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগারঃ প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী গোসল করা। গোসল করার
পরে আপেল সিডার ভিনেগার ভিজিয়ে নিন। এরপর দুহাতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এরপর দুই হাতের কৈনই পর্যন্ত ও বগলে লাগিয়ে দিন। এভাবে নিয়মিত কয়েক সপ্তাহ
ব্যবহার করেন তাহলে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবেন।
বেকিং সোডা ও লেবুর রস
বেকিং সোডা ও লেবুর রসঃ গরমে দুর্গন্ধ দূর করার জন্য বেকিং সোডার সাথে তিন
থেকে চার ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। বেকিং সোডা ও লেবুর রস একসাথে
মিশ্রিত করা হয়ে গেলে পরে মিশ্রণটির দু হাতে কনে পর্যন্ত ও বগলে লাগিয়ে দিন এবং
তিন মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন এর ফলে আপনার ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবেন।
গোলাপ জল
গোলাপ জলঃ আপনি চাইলে খুব সহজে গোলাপ জল দিয়ে আপনার শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ
দূর করতে পারবেন। গোলাপ জল আমরা সকলেই চিনি। গোলাপ জল একটি বোতলে রেখে গোসলের পরে
আপনার পুরো শরীরে স্প্রে করুন। এর ফলে আপনি সারাদিন ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রেহাই
পাবেন।
নিমপাতা
নিমপাতাঃ ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে নিম পাতার ব্যবহারে করলে ঘামের দুর্গন্ধ
প্রতিরোধ করে তুলে এবং ঘামের দুর্গন্ধ জনিত সমস্যার কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন
করে থাকে। আমাদের শরীরের নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে আমরা অতিরিক্ত ঘাম জনিত
সমস্যায় ভুগে থাকি। আর তাই অতিরিক্ত ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য প্রতিদিন
নিমপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে করে আপনার ত্বকের টক্সিন দূর করে এবং
ঘামের দুর্গন্ধ হতে রক্ষা করে।
মধু
মধুঃ ঘর থেকে বের হলে প্রচণ্ড গরম। একটু গরমে নাকাল অবস্থা। শরীরে
ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি হওয়ার কারণে দুর্গন্ধ জনিত সমস্যা দেখা দেয়। ঘামের
দুর্গন্ধ দূর করতে মধুর কোন বিকল্প নেই। একটি পাত্রে সামান্য উষ্ণ গরম পানি নিয়ে
তাতে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে রেখে দিন। গোসলের শেষে মধু মিশ্রিত পানি গায়ে
ঢেলে নিন। এরপর মিশ্রণটি ঘামে দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার করণীয়
- যারা টাইট কাপড় পড়তে পছন্দ করেন তারা টাইট করার থেকে বিরত থাকবেন।
- সর্বদাই চেষ্টা করবেন সাদা পোশাক পরিধান করার।
- অতিরিক্ত রোদোলাস্থান হতে দূরে থাকুন।
- গোসল করার সময় ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার করুন।
- নিজে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।
- নিয়মিত গোসল করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- গোসলের পরে পাউডার ব্যবহার করুন।
- রোদে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন।
- ঘামাচি হলে ঘামাচি নাশক ঔষধ বা পাউডার ব্যবহার করুন।
- শরীরে অতিরিক্ত ঘেমে থাকলে বা কাপড় ভিজে গেলে কাপড় পরিবর্তন করুন।
- মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া পরিমাণ তুলনায় কম করে দিন।
- গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করুন। যেমনঃ ডেটল, লাইফ বয়, স্যাভলন সাবান ব্যবহার করুন।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার হোমিও ঔষধ
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার হোমিও ঔষধঃ ঘামের দুর্গন্ধে অনেক বিরক্তিজনক
একটা ব্যাপার। ঘাম হলে নিজের যেমন বিরক্তিকর ব্যাপার তেমনি পাশে কেউ থাকলে তারও
অনেক বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে অনেক হোমিও ওষুধ
রয়েছে। এখন আমি আপনাদের জানাবো ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার হোমিও ঔষধ সম্পর্কে।
সানিকুলা - বিশেষ করে বাচ্চাদের সারা শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয় এবং
পায়ের পাতাতে দুর্গন্ধ যুক্ত ঘাম হয়। তাদের জন্য হোমিও ঔষধ রয়েছে। এই হোমিও
ঔষধ সানিকুলা সেবন করলে বাচ্চারা খুব সহজেই অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হওয়া
থেকে মুক্তি পাবে।
সালভিয়া অফ- আপনারা যারা অতিরিক্ত ঘামের কারণে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
তারা এই হোমিও ওষুধটি সেবন করতে পারেন। এই সালফিয়া অফ হোমিও ওষুধটি সেবন করার
ফলে আপনি অতিরিক্ত ঘামের থেকে আরগ্য লাভ করবেন।
ফর্মালিন- ফর্মালিন একটি হোমিওপ্যাথি ডিওড্রেন্ট হিসেবে ঘামের
বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। যারা দুর্গন্ধ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা এই ফর্মালিন
হোমিও ঔষধ সেবন করতে পারেন ঘামের দুর্গন্ধ রোধ করার জন্য।
অ্যাকোনাইট- বিশেষ করে যে সকল বাচ্চাদের ঘামের কারণে সর্দি, কাশি ও
জ্বর হয়ে থাকে তারা এই অ্যাকোনাইট হোমিও ওষুধটি আপনার বাচ্চাকে সেবন করাতে
পারেন। তাহলে ঘামের কারণে এ সকল সর্দি, কাশি ও জ্বর সমস্যা হতে মুক্তি
মিলবে।
সর্বশেষ কথা - গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩
প্রিয় পাঠক, আজকের পোস্টে আমি আপনাদের জন্য গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া
উপায় ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা প্রশ্ন
করেছিলেন গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩, ঘাম কি - ঘাম কেন হয়, ঘামের দুর্গন্ধ কেন হয় ? ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়,
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার করণীয়, ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার হোমিও ঔষধ সম্পর্কে।
আশা করি আজকের পোষ্টের সকল প্রশ্নের উত্তর আমরা আপনাদের জানাতে পেরেছি।
আপনাদের যদি গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৩ সম্পর্কে আরো কোন
প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্টের মাধ্যমে
জানাবেন।
আমাদের সঙ্গে থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url