ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা
তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ঢেঁড়সের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পড়ে ঝটপট সকল তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই।
কাঁচা ঢেঁড়সের বৈজ্ঞানিক নাম
আমাদের আজকের আর্টিকেলে এই পর্বে এখন আমরা জানবো কাঁচা ঢেঁড়সের এর বৈজ্ঞানিক নাম কি সেই সম্পর্কে। কাঁচা ঢেঁড়সের কে অনেকেই লালসার রাজা নামে অভিহিত করেন। প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যাপী মান অনুসারে, একটি জীব বা প্রাণীকে একটি বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়। অন্য কথায়, আমরা বিশ্বের প্রতিটি প্রাণীকে তাদের বৈজ্ঞানিক নাম ব্যবহার করে সহজেই সনাক্ত করতে পারি।
বৈজ্ঞানিক নাম লিখতে অবশ্যই ল্যাটিন বা ইংরেজি ব্যবহার করতে হবে। কাঁচা ঢেঁড়সের বৈজ্ঞানিক Abelmoschus esculentus.
আমি আশা করি আপনি কাঁচা ঢেঁড়সের তাদের বৈজ্ঞানিক নাম দ্বারা চিহ্নিত করতে সক্ষম হবেন এবং এটির বানান কীভাবে হয় তা বুঝতে পারবেন।
কাঁচা ঢেঁড়সের ইংরেজি নাম
আমরা এখন জেনে নেব কাঁচা ঢেঁড়সের ইংরেজি নাম সম্পর্কে। আমাদের দেশের সবাই কাঁচা ঢেঁড়স কে " লালসার রাজা" নামে অভিহিত করেন । সবুজ কাঁচা ঢেঁড়স প্রায়ই ইংরেজিতে বলা হয় ওকরা (Okra)।
ঢেঁড়সের এর জাত
বাংলাদেশে ঢেঁড়সের এর জাত রয়েছে অনেক। আমাদের দেশে বেশ কিছু জাত আবহাওয়া অনুযায়ী এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভালো এমন জাত আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়াও কিছু সবুজ মরিচের চাষ রয়েছে যা আগে পাওয়া যাবে। নীচে কয়েকটি সবুজ ঢেঁড়সের জাতগুলির একটি তালিকা রয়েছে
- শাউনি
- পারবনি কানি
- বারি ঢেঁড়স
- পুশা সাওয়ানি
- পেন্টা গ্রিন
- কাবুলি ডোয়ার্ফ
- জাপানি প্যাসিফিক গ্রিন
ঢেঁড়স এর পুষ্টিগুণ
ঢেঁড়সের এর উপকারিতা
কাঁচা ঢেঁড়স খেলে কি হয়
এটি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন এ, বি এবং সি সমৃদ্ধ। আয়োডিনের অভাবে সৃষ্ট গলগন্ড, মস্তিষ্ক এবং হার্টের দুর্বলতা প্রতিরোধে কাঁচা ঢেঁড়স একটি অত্যন্ত উপকারী সবজি। কাঁচা ঢেঁড়স সঠিক পুষ্টি পেতে প্রায় 450 গ্রাম পানিতে কাঁচা ঢেঁড়সগুলি সিদ্ধ করুন যাতে এক কাপ বাকি থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ঢেঁড়সে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঢেঁড়স রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া আরও প্রয়োজনীয় খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ঢেঁড়স খেলে কি গ্যাস হয়
উচ্চ ফাইবার উপাদান পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তাদের জন্য ঢেঁড়স বিশেষ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও এটি বদহজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।
ভেন্ডি খাওয়ার উপকারিতা
ভেন্ডি নিজেই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ওজন হ্রাস এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ সহ ওয়েন্ডির পানি অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে। ভেন্ডির পানি একটি পুষ্টিকর, সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলি পেতে।
কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়
নিয়মিত এক বাটি ঢেঁড়সের তরকারি খেলে কিডনিতে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশের যেকোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।
ফোলেটের ঘাটতি ঠিক করে
শরীরকে সক্রিয় এবং রোগমুক্ত রাখতে নিয়মিত যে পুষ্টির প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে ফোলেট অন্যতম। তাই শরীরে এই উপাদানটির কোনো ঘাটতি থাকা উচিত নয়। এজন্য ঢেঁড়স খাওয়া উচিত। কারণ এই ঢেঁড়স সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট, যা শরীরের চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ কমায়
ঢেঁড়সে উপস্থিত ফাইবার শুধু হার্টের যত্ন নেয় না, মলত্যাগের উন্নতি ঘটিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম এবং গ্যাস-অম্বল জ্বালার মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বেশ কয়েকটি কেস স্টাডিতে দেখা গেছে যে নিয়মিত ঢেঁড়স সেবন করলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে প্রতিদিন এই ঢেঁড়স সবজিটি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে এবং কোষ বিভাজনও নিয়ম মেনে চলার সুযোগ পায়। কারণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকারক বিষাক্ত পদার্থের কোষের গঠন পরিবর্তনের কোনো সুযোগ দেয় না। ফলে ক্যান্সার কোষ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। এভাবে কোষের চরিত্র পরিবর্তন করে ক্ষতিকর কোষে রূপান্তরিত করাকে বলা হয় ‘কোষের মিউটেশন’।
ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে
আপনি যদি অতিরিক্ত কারণে উদ্বিগ্ন হন, তাহলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভাত অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক! কারণ এই ঢেঁড়স সবজিতে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। সেই সঙ্গে বারবার খাওয়ার ইচ্ছাও চলে যায়। ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়।
রক্তশূন্যতার প্রকোপ কমায়
ঢেঁড়সে উপস্থিত বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান শরীরে প্রবেশের পর লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ায়। ফলে রক্তস্বল্পতায় ভোগার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। গত কয়েক দশকে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে নারীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও আমাদের দেশে রক্তস্বল্পতার প্রকোপ কমাতে ঢেঁড়স একটি বিশেষ নীতি গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় এই ঢেঁড়স সবজি কতটা উপকারী হতে পারে, তা আর বোঝাতে হবে না।
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
বলা যায়, শরীরে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে সার্ডিনের বিকল্প নেই। আসলে এই ঢেঁড়স সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। এই উপাদানটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
হাড় মজবুত করে
ঢেঁড়স হাড়ের গঠনের উন্নতির পাশাপাশি অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই 40 বছরের পর প্রত্যেক মহিলার নিয়মিত ভাত খাওয়া উচিত। আসলে একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা যায়। আমাদের দেশে, মহিলাদের বয়স 40 তে পৌঁছানোর সাথে সাথে তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে। ফলে হাড়ের বিভিন্ন রোগ এসে শরীরে বাসা বাঁধে। এখন নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন নারীদের
ঢেঁড়স খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা
অ্যাজমার মতো রোগ প্রতিরোধ করে
আবহাওয়া পরিবর্তন হলে বা ধুলাবালি নাকে ঢুকলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় নাকি?
তারপর, কষ্ট কমাতে, আপনাকে সমস্যার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। কারণ এই ঢেঁড়স
সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী
অ্যালার্জেনগুলি কোনও ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। ফলে হাঁপানির প্রকোপ কমতে
শুরু করে।
ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে
পরিসংখ্যান দেখায় যে আমাদের দেশ ইতিমধ্যে বিশ্বের ডায়াবেটিসের রাজধানী
হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর নতুন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যাও লাফিয়ে
লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত সাম্প্রতিক রিপোর্ট
অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি, যা
আগামী কয়েক বছরে আরও বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন
জানেন? গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন 6-8 ভাগ ঢেঁড়স খেলে শরীরে ইনসুলিনের
উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়
এবং ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
ঢেঁড়স এর অপকারিতা
- ছিদ্র থেকে নিঃসৃত প্রোটিওলাইটিক এনজাইমের সংস্পর্শে আসার কারণে ত্বকের ক্ষত হতে পারে ঢেঁড়সে।
- ঢেঁড়সে অক্সালেট নামক একটি যৌগ রয়েছে। এর বেশি করলে শরীরে কিডনিতে পাথর হতে পারে। কেউ যদি কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে ঢেঁড়স স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
- খুব বেশি ঢেঁড়স খাওয়া কিছু মানুষের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ঢেঁড়স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। এটি অত্যধিক গ্রহণ করলে ডায়রিয়া, গ্যাস, ক্র্যাম্প এবং অন্ত্রের প্রদাহের মতো সমস্যা হতে পারে।
-
রক্তে ভিটামিন-কে পাওয়া যায়। এটি শরীরে রক্ত ঘন করতে কাজ করতে পারে। যারা
রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাচ্ছেন তাদের ডাক্তারের পরামর্শে ঢেঁড়স খাওয়া
উচিত। উভয়ই একসাথে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url